গল্পের নায়ককে হার মানালেন তিনি

শতাধিক শিক্ষার্থীর স্বপ্ন পূরণ করল রেলের অসীম কুমার তালুকদার

Passenger Voice    |    ০৫:০২ পিএম, ২০২৪-০৩-০৯


শতাধিক শিক্ষার্থীর স্বপ্ন পূরণ করল রেলের অসীম কুমার তালুকদার

মোঃ জয়নাল আবেদীন: এবার নাটক সিনেমার গল্পকেও হার মানলেন রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার। যার মানবিকতার বাস্তব গল্পে প্রশংসা কুড়িয়েছে সর্ব মহলে।ইতোমধ্যে রেলওয়ে এই কর্মকর্তার মহৎ কর্মকাণ্ডের সুনাম করছেন নেটিজেনরা। তিনি কি এমন নৈপুণ্য দেখালেন যা মূহুর্তে দেশে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

দেশের সবচেয়ে নিরাপদ বাহন হিসেবে পরিচিত ট্রেন। তাছাড়া কম খরচে এবং আরামদায়ক হওয়ায় শিক্ষার্থী,চাকরীজীবি,ব্যাবসায়ী ও অন্যান্য পেশার মানুষ ট্রেনের যাত্রাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। কিন্তু রেলপথে ট্রেনে চড়তে গিয়ে যেমন যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তেমনি অনেক সময় চরম দুর্ভোগে পড়েছে। আর ট্রেনে ভ্রমণে এসব দুর্ভোগ ও অনিয়ম নিয়ে দেশের গণমাধ্যমগুলোতে উঠে এসেছে। কিন্তু এবারের চিত্র সম্পূর্ন ব্যাতিক্রম যেখানে একজন রেলওয়ে কর্মকর্তার নিদর্শন সবার নজর কাড়েন। আর এই মানবিক নিদর্শনের মানুষটি চলচ্চিত্রের কোন নায়ক নন। তিনি হলেন খোদ বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার। যিনি ৭শ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরিক্ষা যাতে সময়মতো দিতে পারেন সে ব্যবস্থা করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

ঢাকা থেকে রাজশাহীর পথে আসা ধুমকেতু নামের ট্রেনটি ছাড়ে তিন ঘণ্টা দেরিতে। ওই ট্রেনটিতে ছিলেন ৭শ এর বেশি শিক্ষার্থী। এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে যাওয়া শিক্ষার্থীদের অনুরোধে দ্রুত সাড়া দিয়ে ট্রেনটি কিভাবে দ্রুত রাজশাহী পৌঁছানো যায় তার উদ্যোগ নেন রেল কর্মীরা। নির্দিষ্ট সময়ে শিক্ষার্থীরা যাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারেন একারণে চেষ্টার কমতি রাখেননি গার্ড থেকে শুরু করে চালকরা। বুকে হাজারো স্বপ্ন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরিক্ষার উদ্দেশ্য যাওয়া শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ালেন রেলওয়ে ম্যান অসীম কুমার তালুকদার। নির্ধারিত সময়ে শিক্ষার্থীরা যাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারে সেজন্য ট্রেনের গতি বাড়ানোর জন্য নতুন ইঞ্জিন লাগানোর ব্যবস্থা করেছেন তিনি। এছাড়া ট্রেনটি নির্ধারিত স্টেশনে না থামিয়ে যথাসময়ে পৌঁছানোর সুযোগ করে দিয়েছেন।

এই বিষয়ে রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার প্যাসেঞ্জার ভয়েসকে বলেন, যখন ঢাকা থেকে ট্রেনটি তিন ঘন্টা দেরীতে ছাড়ে। তখন গার্ড আমাকে জানায়, স্যার এই ট্রেনে ৭শ পরিক্ষার্থী আছে তারা সবাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) পরিক্ষা দিবে‌। ওই পরীক্ষার্থীরা সম্ভবত বিকালের শিফটে অর্থাৎ ৩টা কিংবা সাড়ে ৩ টায় পরিক্ষা দিবে এজন্য শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল যাতে ট্রেনটি নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছায়। আমরা তাদের বলেছি চেষ্টা করে দেখি কিভাবে দূরত্ব কমিয়ে আনা যায়। এজন্য ড্রাইভার এবং গার্ড মারাত্মকভাবে সচেষ্ট ছিলেন। সেই সাথে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি স্টেশনের আপডেড জানিয়েছেন এবং আমি ভিসি মহোদয়কে বিষয়টি জানাই। কিন্তু ঠিক ৩:৩৮ মিনিটে শিক্ষার্থীরা গন্তব্যে পৌঁছে এবং পরিক্ষা দেয়। আগেই কথা ছিল তাদের হলে প্রবেশ করতে অনুমতি দিবে।

জানা গেছে, দশম বিসিএস রেলওয়ে রেলওয়ে প্রকৌশল ক্যাডারের কর্মকর্তা সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন অসীম কুমার তালুকদার। তিনি পর্যায়ক্রমে পশ্চিমাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চল সিপিও, টিআরএম, পশ্চিম রেলের বিভাগীয় ম্যানেজার (ডিআরএম), সিএস ও প্রধান টেলিকম প্রকৌশলী, সরকারী রেল পরিদর্শক সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। একজন শ্রেষ্ঠ কর্মকর্তা হিসেবে তিনি শুদ্ধাচার পুরষ্কার-২০২০ লাভ করেন। এছাড়া ২০২০-২০২১ সালে রেল মন্ত্রণালয়ের শ্রেষ্ঠ উদ্ভাবক মনোনীত হন তিনি।